৪০ বছর পূর্তিকে স্বরণীয় রাখতে চান্দাইরপাড়া মাদরাসার শিক্ষা সফর- ২০২০ অনুষ্ঠিত

১৯৮০ সালে সিলেট জেলার ঐতিহ্যবাহী বালাগঞ্জ উপজেলার ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম ২ সঙ্গী হযরত মিঞা চান্দাই ও মিঞা রাস্তি (রঃ) এর স্মৃতি বিজড়িত চান্দাইরপাড়া গ্রামে "চান্দাইরপাড়া সুন্নিয়া হাফিজিয়া ফাজিল মাদরাসা" প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই ছোট্ট ঘর থেকে দিয়ে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটি এলাকাবাসী, সাবেক-বর্তমান গভর্ণিং বডির সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ ৪০ তম বছরে ফাজিল মাদরাসায় রুপ লাভ করে। ৪০ সংখ্যাটি একটি বরকতপূর্ণ সংখ্যা। তাই মাদরাসার ৪০ বছর পূর্তিকে স্বরণীয় করে রাখতে মাদরাসার পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় শিক্ষা সফর-২০২০।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার মাদরাসার নির্বাচিত প্রায় শ'খানেক ছাত্র, শিক্ষকবৃন্দ, গভর্ণিং বডির সদস্য, পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চান্দাইর পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের  ছাত্রদের নিয়ে সকাল ৬টা থেকে শিক্ষা সফরের কার্যক্রম শুরু হয়।

সকাল থেকেই অংশগ্রহণকারীদের সরব উপস্থিতিতে প্রিয় এই ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে উঠে ।  সকাল ৬টা থেকে স্বেচ্ছা সেবকদের উপস্থিতি, ৬.৩০ মিঃ থেকে ছাত্রদের রেজিষ্ট্রেশন, মাদরাসার নামসহ শিক্ষা সফর ২০২০ লেখা টি-শার্ট, কলম ও আইডি কার্ড প্রদান করা হয়।  সকাল ৭.৩০ মিঃ থেকে গাড়িতে আসন গ্রহণ ও সকাল ৮ টায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হয়। নির্ধারিত ৩ টি গাড়ির মধ্যে ১ম গাড়ি মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, গভর্নিং বডির সদস্য ও শিক্ষকবৃন্দ এবং ২য় ও ৩য় গাড়িতে ২ জন করে শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সকাল ১০ টায় মৌলভীবাজার শহরস্থ হযরত শাহ মোস্তফা (রঃ)'র মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সফরের মূল কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১০.৩০ মিনিটে মৌলভীবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মহোদয়, শিক্ষকবৃন্দ ও তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওঃ ইউনুস আলী সাহেবের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যক্ষ মহোদয় ও মাদরাসা কতৃপক্ষদের পক্ষ থেকে সকালের নাস্তার ব্যবস্থাও করেছিলেন। তাদের ব্যবহার ও আতিথেয়তা ছিল মনে রাখার মতো ও প্রসংশনীয়।

১১.৩০ মিনিটে অধ্যক্ষ মহোদয়ের নেতৃত্বে সবাইকে নিয়ে মাধবপুর লেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হয়। যাত্রাপথে ছাত্রদের ২টি গাড়িতে দায়িত্বরত শিক্ষগণ বিনোদন ও শিক্ষামূলক বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনা করেন, যা আসলেই ছাত্রদের জন্য বিনোদনের পাশাপাশি অনেক কিছু শিক্ষণীয়ও ছিল বটে।

১২.৪৫ মিনিটে মাধবপুর লেকে প্রাকৃতিক লীলা নিকেতন রুপসী বাংলা মায়ের অপরুপ দৃশ্য অবলোকন ও জোহরের নামাজ আদায় করা হয়। বিনোদনের পাশাপাশি আল্লাহ পাক প্রদত্ত নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সত্যিই ছিল মনোমুগ্ধকর ও নজর কাড়ার মতো। 

২.৩০ মিনিটে অধ্যক্ষ মহোদয়, গভর্ণিং বডির সদস্য, শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে খাবারের দৃশ্যটা একটি একান্নবর্তী পরিবারের সাথে তুলনা করা যায়।

অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সূচারুপে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিকাল ৩ টায় প্রিন্সিপাল হুজুরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হয়।  পথিমধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার এলাকার কোন একটি মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করা হয়। বিকাল ৪.৩০ মিনিটে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে গিয়ে পৌছা হয় এবং সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করে বিকাল ৪.৪৫ মিনিটে ১৯৭১ সালের শহীদদের স্বরণে নির্মিত বধ্যভূমি পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা হয়। বিকাল ৫ টায় বধ্যভুমিতে গিয়ে পৌছায় শিক্ষা সফর দল। শেষ বেলার সূর্য ডোবার সময়কার পানির ফোয়ারাটি বধ্যভূমিটির সৌন্দর্যকে করেছে আরো মোহময়। সাত- আট রঙ্গের চা দর্শনার্থীদের সকল ক্লান্তি দূর করে শরীর ও মনে সতেজতা আনতে অন্যরকম ভুমিকা পালন করছে। শহীদদের কবর জিয়ারতের পাশাপাশি শিক্ষামূলক কিছু ইভেন্ট পরিচালনাও করা হয়। নানা রকম শিক্ষা ও বিনোদনমূলক ইভেন্টের পর শিক্ষা সফরের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য অধ্যক্ষ মহোদয়, গভর্ণিং বডির সদস্য, শিক্ষকবৃন্দ ও ছাত্রদের নিয়ে একটি গ্রুপ ছবিও তুলা হয় যা কালের সাক্ষী হিসেবে থাকবে অনেক দিন পর্যন্ত।

সকল কার্যক্রমের পর সমাপনী অনুষ্ঠানে লাকি কুপন ও ইভেন্ট বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মাদরাসার শিক্ষকবৃন্দ। দিনের আলো নিভে এলো, সূর্যি ডুবে ডুবে অবস্থায় মাগরিবের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে অনেক স্মৃতিকে সাথে নিয়ে রওয়ানা দেয়া হয় চিরচেনা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে।

কিছুদূর এগুনোর পরই মাগরিবের আজান হয়ে যাওয়ায় রাস্তার পাশেই কোন একটি মসজিদে নামাজ আদায় করা হয়। বাদ মাগরিব গাড়িতে ছাত্রদেরকে নাস্তার ব্যবস্থাও করা হয় যা তাদের এনার্জি যোগাতে কিছুটা সাহায্য করেছে।

সারা দিনের ক্লান্তির পরও ছাত্রদের উৎসাহ ও আগ্রহের কারণে গাড়িতে কিছু ইভেন্ট পরিচালনাও করা হয়।

প্রকৃতির রূপসী কন্যার অপরুপ দৃশ্য অবলোকন, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন ইভেন্ট এবং নানারকম অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শিক্ষা সফর-২০২০।

২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ গত, কিন্তু সে দিনের মধুমাখা স্মৃতি এই সফরে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের হৃদয় পটে অংকিত হয়ে থাকবে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত।

এত সুশৃঙ্খল ও সফল শিক্ষা সফর মাদরাসার ৪০ বছর পূর্তিকে স্বরণীয় রাখতে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা রাখি।

ধন্যবাদ অংশগ্রহণকারী সবাইকে।